সমস্যা জীবনেরই অংশ

সমস্যা জীবনেরই অংশ। কোন কোন সময় তা চাকরি বা পেশারও অংশ। মানুষ এবং সিস্টেম নিয়েই মানুষের পেশাগত জীবন। এ জীবনে সমস্যার সঠিক ও যুক্তিযুক্ত সমাধান যে শুধু পেশাগত জীবনের মানোন্নয় করে তাই নয়। কখনো কখনো সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের নতুন সেতুবন্ধন রচিত হয়। রচিত হয় নতুন নতুন গল্প। সে গল্প মানুষ যুগ যুগ ধরে বংশ পরস্পরায় শেয়ার করে। মানুষের জীবনের গল্প তো আসলে সুখদুঃখ, বাধা-বিঘ্ন ও জয়-পরাজয়েরই গল্প। অবশ্যই ভালোবাসার আর ভালোলাগারও গল্প। মানুষকে ভালোবাসার গল্প অন্য সব কিছুর চেয়ে রঙিন। মানুষের অধিকার বুঝিয়ে দিতে পারলে তা আরও বহু রঙে বর্ণিল হয়ে উঠে। আমরা দেশকে ভালোবাসার কথা বলি। দেশ কি মানুষ ছাড়া হয়? দেশ তো মাটি। মাটিকে আমি ভালোবাসলেও তার কাছ থেকে সাড়া পাইনে। তাই দেশকে ভালোবাসার অর্থ দেশের মানুষকে ভালোবাসা। দেশের মানুষকে ভালো না বেসে দেশকে ভালোবাসা কী করে সম্ভব? দেশের মানুষকে ভালোবাসার অর্থ তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য করা। সাধ্যানুযায়ী কাঁথে কাঁথ মিলিয়েই তা করা। মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হরণ করার মধ্যে মনু্ষ্যত্বের কিছু নেই। তা যে কোন উছিলাতেই হোক না কেন। অন্যায় সর্বতোভাবেই অন্যায়। অন্যায় সর্বাবস্থায় পরিহার করা উচিত। ন্যায়ই সত্য-ন্যায়ই সুন্দর।
পুনশ্চঃ
এই লেখাটি সার্বজনীন প্রেক্ষাপটে লেখা। কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে নয়। পরিবারের, সমাজের, প্রতিষ্ঠানের,রাষ্টের বা সংঘের একজন মানুষও যদি ন্যায়সঙ্গত অধিকার হতে বঞ্চিত হয় তাও অন্যায়। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে বলা হয় ” ১০ জন অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক কিন্তু একজন নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়।” আইনের উদ্দেশ্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা।বিশৃঙ্খলার নিরসন করা।বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি নয়।

নেতৃত্ব কি শুধুই প্রভাব?

নেতৃত্ব কি শুধুই প্রভাব?
-মোঃ বদিউজ্জামান
—————————————
একজন নেতাকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজের ধারা বা ধরণ বা পদ্ধতি ঠিক করে দিতে হয়। নেতা যেভাবে কাজের ধরণ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করেন অনুসারীরা সেভাবেই কাজ করেন। অধীনস্ত বা অনুসারীরা নেতার নিকট হতে কাজের সঠিক দিকনির্দেশনা না পেলে তারা দিকভ্রান্ত বা লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে। দ্বৈত নেতৃত্বের ফলেও একই ঘটনা ঘটে। ফলে তারা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যমুখি কাজ করতে পারেন না। যা উৎপাদনশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সামগ্রিকভাবে মোট উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। নেতার কাজ অনুসারীদেরকে প্রভাবিত করে। নেতার কাজের স্পৃহা অনুসারীদের মধ্যেও কাজের গতি সঞ্চার করে। শক্তিশালী ও অমিত কর্মস্পৃহার অধিকারী কর্মীরা নেতাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করেন। কারণ তারা জানেন যে, নেতৃত্ব যে কোন অবস্থান থেকেই গড়ে উঠতে পারে। নিজেদেরকে নেতৃত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য কর্মস্পৃহা সম্পন্ন কর্মীরা সদা তৎপর থাকেন । যে নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে যে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের জন্য উদ্যম নিয়ে কাজ করবে সে নেতৃত্ব সব সময় উদ্যমী কাজের মাধ্যমে কর্মীদের পাশে থাকে। কারণ অনেক কর্মী নেতাদের যেভাবে কাজ করতে দেখেন তারা সেভাবে কাজ করে নিজেদেরকে মানসিকভাবে নেতার কাছাকাছি মনে করেন। নেতৃত্ব এক অদৃশ্য শক্তি কিন্তু কাজের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়ে উঠে।
জন সি ম্যাক্সওয়েল (John C. Maxwell) নেতৃত্বকে প্রভাব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “Leadership influence, nothing more nothing less তাই আপনি যেভাবে আপনার অনুসারীদেরকে প্রভাবিত করবেন তারা সেভাবেই প্রভাবিত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে আপনি তাদেরকে কীভাবে এবং কোন শক্তির দ্বারা প্রভাবিত করবেন? ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক শক্তির দ্বারা? ইতিহাসে উভয় ধরণের প্রভাবের দ্বারা তাড়িত নেতা ও নেতৃত্ব দেখতে পাওয়া যায়। আবার এও সত্য যে পৃথিবীর মানুষ নেতৃত্বের ইতিবাচক ও নেতিবাচকতাকে আপেক্ষিকতার মানদন্ডে পরিমাপ করে থাকে। সময় আর পরিবর্তন নেতাকেও ভিলেন বানায় আবার ভিলেনকেও নেতা বানায়। পৃথিবীর মানুষ বিজয়ীকে বীর খেতাব দেয়। আর পরাজিতকে শত্রু, দুশমন বা ভিলেন খেতাব দেয়। কারণ ইতিহাস লেখে বিজয়ীরা। তারাই নির্ধারিত করে কে ভিলেন আর কে নায়ক।
যে হিটলারের নেতৃত্বের প্রভাবে জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে ইউরোপের বহুদেশ দখল করেছিল তারাই আবার পরাজযের পর হিটলারের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছিল। যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনী জয়লাভ করত তাহলে হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে না হলেও জার্মানীর ইতিহাসে বীর হিসেবেই হিটলারের স্থান নির্ধারিত হত।
প্রতিদিনের দাপ্তরিক কাজেও কর্মীরা নেতার কাজ, মনোভাব, নিয়ন্ত্রণ,নির্দেশনা, কর্মীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, সহমর্মিতা ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়। যোগ্য নেতারা সব সময় সত্য প্রকাশের মাধ্যমে কর্মীদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন এবং পারস্পরিক দুরত্বের ব্যবধান কমিয়ে আনেন বা দূর করেন । কর্মীদের মনে নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি ও তা বজায় রাখেন। কারণ বিশ্বাস নেতৃত্বের ভিত্তি। বিশ্বাস ছাড়া নেতৃত্ব কাঁচের জার ছাড়া কিছু নয়।

দৃষ্টিবান অন্ধ

দৃষ্টিবান অন্ধ
– মোঃ বদিউজ্জামান
——————-
এখন অন্ধরাই ভালো দেখে
দৃষ্টিবানদের তুলনায়
তারা দেখে অনুভূতির দৃষ্টি দিয়ে,
দৃষ্টিবানেরা আছে মহাসংকটে
বহুবর্ণে দেখার যন্ত্রণা নিয়ে।
আমরা অনেকেই আছি
এমন সংকটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
কী যে হয় আমাদের দৃষ্টির!
রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও
আনাগোনা দেখি বৃষ্টির।
শুনেছি ইতিহাসে
সত্য বাবু প্রায়ই মারা যায়
তা ইতিহাস তো বহুত ভজঘট বিষয়
আমরা এই নাদান মানুষেরা
কেন যে দৃষ্টিহারাই ক্ষণে ক্ষণে
জানি না, কী যে কী আশায়!
দৃষ্টিবান অন্ধকে নিয়ে
আমার ভীষণ ভয়
এরা কখন যে বন্ধু
আর কখন যে শত্রু হয়
কখন যে নির্মম নিষ্ঠুরতায়
আবর্জনা ভেবে
ময়লার গাড়িতে তুলে দেয়
দৃষ্টিবান অন্ধকে নিয়ে তাই
আমার ভীষণ ভয়।
সম্মাানিত সুধিজনের কাছে
আমার জানতে ইচ্ছে হয়
খুব বেশী জানতে ইচ্ছে হয়
দৃষ্টিবান অন্ধরা কী আপন হয়?
তারা কী দেশপ্রেমিক হয়?
তারা কী বিবেকের তাড়নায়
আমাদের দুঃখে পীড়িত হয়?
তারা কী সময়ের চাকায়
শুধুই আয়েশী সওয়ারী হয়?
কি বিস্ময়!দৃষ্টিবান অন্ধরাই
হেঁটে চলে সুবর্ণ সিঁড়িতে,
যখন সত্যের সূর্য অস্ত যায়
অসময়ে,অবেলায়।

আমার একটা জীবন ছিল

আমার একটা জীবন ছিল
-মোঃ বদিউজ্জামান
———————————-
আমার একটা জীবন ছিল
সেই সে শিশু কিশোরকালে
নতুন চোখে দেখতে পেতাম
দোয়েল পাখি, লক্ষী পেঁচা
সেই সে উঁচু গাছের ডালে।
বানের জলে টেংরাপুটির
উজান বাওয়া দেখে
খালই জালে ঘেরা দিতাম
নাওয়া খাওয়া রেখে।
আমার একটা জীবন ছিল
সাতসকালে উঠে
শিশির ভেজা ঘাসের ছোঁয়া
নিতাম পায়ে মেখে।
চঁড়ুই পাখি, বাবুই পাখির
দেখে উড়াউড়ি
আকাশ পানে উড়িয়ে দিতাম
কত রঙিন ঘুরি!
মেস্তাপাটের পাতা তুলে
হাতে ডলেডলে
টকের স্বাদে মুখে দিতাম
হাসিখেলার ছলে।
ফড়িং ধরার খেলায় মেতে
ছুটে ফড়িং পানে
পেড়িয়ে যেতাম মাঠ প্রান্তর
ছুটতাম দূরের গ্রামে।
আমার একটা জীবন ছিল
আহা কত সুখের
ভেবে কত কান্না আসে
ব্যথা বাড়ায় বুকের।
সেই জীবনে সুখ যে ছিল
ছিল গভীর ভালোবাসা
এখন জীবন পানসে কেমন
কেমন উদাস, কেমন ভাসাভাসা!