নেতৃত্ব কি শুধুই প্রভাব?

নেতৃত্ব কি শুধুই প্রভাব?
-মোঃ বদিউজ্জামান
—————————————
একজন নেতাকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজের ধারা বা ধরণ বা পদ্ধতি ঠিক করে দিতে হয়। নেতা যেভাবে কাজের ধরণ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করেন অনুসারীরা সেভাবেই কাজ করেন। অধীনস্ত বা অনুসারীরা নেতার নিকট হতে কাজের সঠিক দিকনির্দেশনা না পেলে তারা দিকভ্রান্ত বা লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে। দ্বৈত নেতৃত্বের ফলেও একই ঘটনা ঘটে। ফলে তারা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যমুখি কাজ করতে পারেন না। যা উৎপাদনশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সামগ্রিকভাবে মোট উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। নেতার কাজ অনুসারীদেরকে প্রভাবিত করে। নেতার কাজের স্পৃহা অনুসারীদের মধ্যেও কাজের গতি সঞ্চার করে। শক্তিশালী ও অমিত কর্মস্পৃহার অধিকারী কর্মীরা নেতাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করেন। কারণ তারা জানেন যে, নেতৃত্ব যে কোন অবস্থান থেকেই গড়ে উঠতে পারে। নিজেদেরকে নেতৃত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য কর্মস্পৃহা সম্পন্ন কর্মীরা সদা তৎপর থাকেন । যে নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে যে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের জন্য উদ্যম নিয়ে কাজ করবে সে নেতৃত্ব সব সময় উদ্যমী কাজের মাধ্যমে কর্মীদের পাশে থাকে। কারণ অনেক কর্মী নেতাদের যেভাবে কাজ করতে দেখেন তারা সেভাবে কাজ করে নিজেদেরকে মানসিকভাবে নেতার কাছাকাছি মনে করেন। নেতৃত্ব এক অদৃশ্য শক্তি কিন্তু কাজের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়ে উঠে।
জন সি ম্যাক্সওয়েল (John C. Maxwell) নেতৃত্বকে প্রভাব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “Leadership influence, nothing more nothing less তাই আপনি যেভাবে আপনার অনুসারীদেরকে প্রভাবিত করবেন তারা সেভাবেই প্রভাবিত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে আপনি তাদেরকে কীভাবে এবং কোন শক্তির দ্বারা প্রভাবিত করবেন? ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক শক্তির দ্বারা? ইতিহাসে উভয় ধরণের প্রভাবের দ্বারা তাড়িত নেতা ও নেতৃত্ব দেখতে পাওয়া যায়। আবার এও সত্য যে পৃথিবীর মানুষ নেতৃত্বের ইতিবাচক ও নেতিবাচকতাকে আপেক্ষিকতার মানদন্ডে পরিমাপ করে থাকে। সময় আর পরিবর্তন নেতাকেও ভিলেন বানায় আবার ভিলেনকেও নেতা বানায়। পৃথিবীর মানুষ বিজয়ীকে বীর খেতাব দেয়। আর পরাজিতকে শত্রু, দুশমন বা ভিলেন খেতাব দেয়। কারণ ইতিহাস লেখে বিজয়ীরা। তারাই নির্ধারিত করে কে ভিলেন আর কে নায়ক।
যে হিটলারের নেতৃত্বের প্রভাবে জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে ইউরোপের বহুদেশ দখল করেছিল তারাই আবার পরাজযের পর হিটলারের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছিল। যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনী জয়লাভ করত তাহলে হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে না হলেও জার্মানীর ইতিহাসে বীর হিসেবেই হিটলারের স্থান নির্ধারিত হত।
প্রতিদিনের দাপ্তরিক কাজেও কর্মীরা নেতার কাজ, মনোভাব, নিয়ন্ত্রণ,নির্দেশনা, কর্মীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, সহমর্মিতা ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়। যোগ্য নেতারা সব সময় সত্য প্রকাশের মাধ্যমে কর্মীদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন এবং পারস্পরিক দুরত্বের ব্যবধান কমিয়ে আনেন বা দূর করেন । কর্মীদের মনে নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি ও তা বজায় রাখেন। কারণ বিশ্বাস নেতৃত্বের ভিত্তি। বিশ্বাস ছাড়া নেতৃত্ব কাঁচের জার ছাড়া কিছু নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *