কালাপা টা কালা পর্ব-১

আমি উচ্চারণ করি কালাপা টা কালা। আমার মেয়ে উচ্চারণ করে কালা পা-টা কালা। প্লেটো বলেছিলেন, ‘ কালাপা টা কালা ’ অর্থাৎ ‘যা সুন্দর তা কঠিন ’(What that is beautiful is hard). . ব্যঙ্গ করে মেয়ে উচ্চারণ করে ‘ কালা পা-টা কালা ’ (The black leg is black). প্রথমে আমি মনে করতাম এটা উচ্চারণের বিভ্রাট। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার পর বুঝতে পারলাম এটা আসলে চিন্তার বিভ্রাট নয়। এটা উপলদ্ধির বিভ্রাট। উপলদ্ধির বিভ্রাট পক্ষপাতিত্বের কারণেও হতে পারে, আবার জ্ঞানের বা  জানার সীমাবদ্ধতার কারণেও হতে পারে। স্বার্থের কারনেও যে তা হতে পারে সে কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। আর স্বার্থ মানেই যে সেখানে অর্থ বা আর্থিক বিষয় বা বস্তুগত বিষয় থাকতে হবে তারও মানে নেই। আমার কাউকে পছন্দ হয় না, আমি কাউকে দাবিয়ে রাখতে চাই, কেউ আমার কাছে বিনা কারণে মাথা নত করুক, অন্য সবার মত হুজুর হুজুর করুক কিংবা প্রশংসা করতে করতে মুখ দিয়ে গ্যাজলা বের করুক এমনটাই আমি চাই। এমনভাবে ফেনা বের করুক যেন দেখে মনে হয় যে তার শরীরের ভেতরে ডিটারজেন্টের কারখানা আছে (হাসি)। এমনি আরও অনেক বিষয় আছে যা তুচ্ছ ও দুর্বল মানুষের কাছে ব্যাক্তিগত স্বার্থ মনে হয়। মানুষকে মর্যাদার চোখে না দেখে অমর্যাদা এবং অসম্মানের চোখে দেখাও তাদের কাছে স্বার্থ। তাদের ভাবনা অন্য কেউ নীচু হলেই না আমি উঁচু! এ সব ধ্যান ধারণা হচ্ছে বিকৃত মনের বিকৃত আকাংখা। শক্তিমান মানুষ কখনো মানুষকে উঁচু-নীচুর ভিত্তিতে দেখে না। দেখতে পারে না। দেখতে পারলে তারা আর শক্তিমান মানুষ থাকে না। নবী রাসুল ও অবতারগণ তা কখনো পারেননি। পারেননি পৃথিবীর অনেক বড় বড় মহামানব, নেতৃবৃন্দ, পন্ডিতগণ ও বিদ্যানরা। আবার পন্ডিত আর বিদ্যান হলেই যে বড় মনের, বড় হৃদয়ের মানুষ হবে তাও বোধহয় ঠিক না। নিজের স্বার্থের প্রশ্নে এরাও কম যায় না। স্বার্থের ঝোল টানতে এরাও বেশ ওস্তাদ। আর শিক্ষিতদের নিয়ে বড় বিপদ। কাজেই এদের বিষয়ে কথা  বলা  কঠিন এবং বিপদজনক। এরা যে কিসে মাইন্ড করে আর কিসে মাইন্ড করে না তা ভাবাও কঠিন। এই শিক্ষিত লোকেরাই বাংলা শোষণ করেছে ২৪ বছর। আর শিক্ষিত বৃটিশরা বাংলা শোষণ করেছে ২০০ বছর। এরা অবশ্য সারা দুনিয়াই শোষণ করেছে। তবে বাংলার শিক্ষিত লোকদের বিষয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে বলেছেন, ‘ ১৯ বৎসর পর্যন্ত চলেছে শোষণ আর লুন্ঠন। এখন এরা বুঝে ফেলেছে এদের জুলুম করার কায়দা কৌশল। তবে আর বেশীদিন নাই। যদিও জাতি হিসেবে বাঙালি পরশ্রীকাতর জাতি। ‘পরশ্রীকারতা’ দুনিয়ার অন্য কোন ভাষায় খুঁজিয়া পাওয়া যাবে না, একমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া।’

অবশ্য জার্মান ভাষায়ও একটি আজব শব্দ আছে অন্য ভাষায় যার প্রতিশব্দ নেই।

-চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *