জীবন নামের ছোট্র ট্রেনে
লোভের বোঝা টেনে টেনে
ছুটছে পথিক উর্ধ্বশ্বাসে
ভাবছে না কেই একটুখানি
জীবন নামের গাড়ীখানি
থামবে কখন এক নিঃশ্বাসে।
জীবন নামের পলকা গাড়ী
তাই নিয়ে কি বাহাদুরী!
জীবন নামের সময় গাড়ী
তাই নিয়ে কি জুয়াচুরি!
জীবন নামের ছোট্র ট্রেনে
লোভের বোঝা টেনে টেনে
ছুটছে পথিক উর্ধ্বশ্বাসে
ভাবছে না কেই একটুখানি
জীবন নামের গাড়ীখানি
থামবে কখন এক নিঃশ্বাসে।
জীবন নামের পলকা গাড়ী
তাই নিয়ে কি বাহাদুরী!
জীবন নামের সময় গাড়ী
তাই নিয়ে কি জুয়াচুরি!
পথে পথে হাঁটাহাঁটি
পথের মানুষ পথে থাকি
পথের মাঝে রত্ন খুঁজি
পথকেই আমি আপন বুঝি।
পথের মাঝে রত্ন খোঁজা
নয়তো কভু সহজ সোজা
তবু থাকি পথে পথে
পথ চলাতে মজা আছে।
পথ হাঁরায়ে পথ খুঁজি ভাই
পথের দিশা কাকে শুধাই
সবাই পথিক পথহারা ভাই
পথের দিশা কাহারও নাই।
ভ্রান্ত পথিক ভ্রান্ত পথে
চলছে ছুটে দিবারাতে
পথিক সবাই ছুটছে শুধু
জীবনখাতা মরু ধুধু।
ওখানে এক বিশাল মহীরুহ
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলো কালের সাক্ষী হয়ে
অর্ধ শতাব্দীরও অধিকা কাল আমি তাকে দেখছি
আকাশের দিকে সে বাড়ছে তো বাড়ছেই।
আমি তার ছায়ায় বসে অগণিত দিন কাটিয়েছি
বুদ্ধের মত ধ্যানমগ্ন হবার চেষ্টা করে।
আমার সাথে ভবঘুরে, নেঁড়ি কুকুর,
অবহেলায় বেড়ে উঠা বেড়ালও থাকত।
লালপিঁপড়ে, কালো মাজুল,ঝিঝি পোকা
কাঠঠোকড়া,ঘুঘু, প্রজাপতি, ফড়িং
গেছো ব্যাঙ আর কাকেরা তো থাকতই।
ঝিঝি পোকার ডাক অবশ্য আমি
প্রকৃতির গান হিসেবেই মেনে নিয়েছিলাম।
আমি গাছকে দেখেছি
স্রষ্টার সাথে কথা বলতে।
শীতে সব পাতা ঝড়ে
গাছ শীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে পড়ত
পত্রহীন ডালপালা থেকে শীতের শিশির পড়ত
টপ টপ টপ টপ টপ টপ।
আমার মনে হতো
এ যেন স্রষ্টার কাছে
গাছের প্রার্থনা শ্বেত অশ্রুবিন্দু।
আবার কখনো মনে হতো
অশ্রুবিন্দ নয়
যেন মুক্তার ফোটা ফোটা দানা
আমি তাকে প্রার্থন করতে দেখতাম।
তার প্রার্থনায় প্রভুর সাড়া দিতেও দেখতাম।
নতুন পত্রপল্লবে সাজত তার শীর্ণ দেহ।
প্রভুর সাথে তার কি কথা হতো তা অবশ্য
আমি জানতে পারিনি
তবে প্রভুর কাজ আমি দেখেছি।
প্রভুর আর্শীবাদে ধন্য হয়ে
সে চেনা অচেনা সবাইকে ছায়া দিতো
ফল দিতো বেসুমার
ঔষধি ছাল বাকলও দিতো সে
নিজের গা উদোম করে দিয়ে।
নাম না জানা
কী সব কীটপতঙ্গকেও
সে আশ্রয় দিতো।
তারা তার দেহে
গর্ত খুড়ে খুড়ে বাসা বানাত।
শত শত পাখিদের প্রজননে
সে ছিলো আদর্শ বসতবাড়ী।
কাউকে সে অবহেলা করতো না
পরম ঈশ্বর পরম করুণায়
গাছকে মানুষের মত
অবহেলা করতে শেখাননি।
মানুষের মত
নির্দয় ও নির্মম হতেও শেখাননি।
এই নগরের অনেক গৃহহীন
তার পাদদেশে আয়েস করে
ছেঁড়াকাথা, টুকরো কাগজ
পরিত্যক্ত প্লাস্টিক, ময়লা কাপড়
দিয়ে প্রাসাদ গড়ে ঘুমাত।
সে কিচ্ছু বলত না
সে ভাবত তার কিচ্ছু হবে না
সে ভাবত সে মানুষের বন্ধু।
কিন্তু সে জানত না
তার জানা ছিলো না
মানুষেরা কখনও বন্ধু হয় না
মানুষেরা বন্ধু বন্ধু খেলে
সীমাহীন উদাসীনতা আর অবহেলে।
সীমাহীন স্বার্থের দ্বন্দ্বে
মানুষেরা বন্ধুত্ব মুছে ফেলে।
মানুষের বন্ধুত্ব
স্বার্থ স্বার্থ খেলা
প্রয়োজন শেষে
আছড়ে ভেঙ্গে ফেলা।
হঠাৎ একদিন একদল লোক এসে
করাত চালায় শীর্ষ ডালে বসে
কেটে কেটে ফেলে বড় বড়
সব শাখা প্রশাখা
এবারও বৃক্ষ কথা বলে স্রষ্টার সাথে
আকুতি মিনতি জানায় নীরবে নিভৃতে
বৃক্ষের হয়ে প্রার্থনা জানাই আমি
কিন্তু স্রষ্টা এবার
পালন করেন নীরবতা
স্রষ্টার নীরবতায়
বাড়ে আমাদের ব্যাকুলতা
স্রষ্টা তবু নীরব থাকেন
বুঝি প্রার্থনা করা বৃথা।
পাখিরা সব করে কলবর
কাকেরা নগর তোলে মাথায়
ভবঘুরে দূরে বসে ভাবে
হাত দিয়ে তার মাথায়।
ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকি আমি
ভগ্ন হৃদয় নিয়ে
সান্তনা খুঁজি নিজ হৃদয়ে
মিথ্যা অভিশাপ দিয়ে
বৃক্ষহীন বাতাসে আমার অভিশাপ
ফিরে আসে তপ্ত বায়ুর মত
আমি নাগরিক অসহায় বড়
হতবিহ্বল বড় বেশী বিব্রত।
আমি নাগরিক নির্বাক বড়
নিস্তব্ধ হয়ে রই
মনে মনে ভাবি
কেমন করে এত
অনাচার আমরা সই।
আমরা না হয় অসহায় মানুষ
নিরুপায় হয়ে নিষ্ঠুরতা সই
ঈশ্বর তুমি সর্বশক্তিমান
তোমার সক্ষমতা কই?
মানুষের মত তুমিও কী
ঈশ্বর নীরব দর্শক হও
তুমিও কি ঈশ্বর অসহায় মানুষের
শক্তি সহায় নও।
প্রশ্নবিদ্ধ মন, অশ্রু ভেজা নয়ন
আর রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে
কৃতজ্ঞতার ঋণ শুধি আমি
অকৃত্রিম শোক জানিয়ে।
শতাব্দী প্রাচীন বৃক্ষের খোঁজে
এই নগরের পথে পথে আমি হাঁটি
তুমি বন্ধু কথার যাদুকর
কথায় কথায় যাদু কর
ছুঁড়ো যাদুর বান
বিষের বানে
নীল করে দাও
শুদ্ধ কোমল প্রাণ।
তুমি বন্ধু হৃদয়েতে
ছুঁড়ে মারো
বিষমাখানো তীর
কথার বানে ——
——অসমাপ্ত